নিয়মিত রেশন তুলছেন, বিনামূল্যে পাচ্ছেন চাল-গম, তবে আপনি এই সুবিধা পাওয়ার যোগ্য তো? আপনার রেশন কার্ডে আদৌ রেশন পাওয়ার অধিকার আছে কি না, এসবই এবার যাচাই করবে আয়কর দপ্তর। ইতিমধ্যে, এই যাচাই প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে।
আয়কর কর্তাদের মতে, যাঁরা বেশি আয় করেও গরিবদের জন্য প্রযোজ্য রেশন সুবিধা নিচ্ছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে গোটা ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তবে, এই উদ্যোগ কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওয়াকিবহাল মহল। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে, একটি বড় অংশের রেশন গ্রাহককে বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। রেশন গ্রাহকদের ভর্তুকির টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর পরিকল্পনা ইতিমধ্যে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। আয়কর দপ্তরের তৎপরতা এই বিতর্কের নতুন পরিসর তৈরি করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনা পরবর্তী সময়ে, কেন্দ্র ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বৃহৎ অংশকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য প্রদান শুরু করেছিল। ২০২৮ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আগেই করা হয়েছে। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় পশ্চিমবঙ্গের বহু মানুষ বিনামূল্যে খাদ্যশস্য পান। তাঁদের একটি বড় অংশ ‘অন্নপূর্ণা অন্ত্যোদয় যোজনা’ আওতায় পরিবার প্রতি মাসে ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য পান, আর বাকিরা পান মাথাপিছু পাঁচ কেজি করে।
আরও পড়ুন : বাড়িতে বসে প্রতি মাসে ১ ৫ ০ ০ ০ টাকা আয় করুন।
তবে, কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে, বিভিন্ন রাজ্যে খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় থাকা প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপকদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাদের বিনামূল্যে রেশন প্রয়োজন নয়, কিন্তু তারা তবুও এই সুবিধা পাচ্ছেন।
এদিকে, ভর্তুকি বাবদ বিপুল অর্থ খরচ করছে কেন্দ্র। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেটে ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’ খাতে ভর্তুকি বাবদ ২ লক্ষ ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকার চাইছে, ভর্তুকির খরচ কিছুটা কমিয়ে, সেই অর্থ অন্য খাতে ব্যবহার করা হোক।
মোদি সরকারের আয় কমছে এবং উৎপাদন ক্ষেত্রেও কোনো সাড়া মিলছে না। সেক্ষেত্রে, কেন্দ্রের যুক্তি হলো, যদি আয়কর ছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে সেই শ্রেণির মানুষদের বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কারণ কী? এমনভাবে, রেশন সুবিধা ভোগকারী সেসব মানুষদের চিহ্নিত করে, সরকার ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে উদ্যোগী হয়েছে।
সূত্রের খবর, আয়কর সংক্রান্ত তথ্য ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রককে জানানোর জন্য ‘সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস’ তাদের ‘সিস্টেম’ বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছে। ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রক তাদের অধীনে খাদ্য ও গণবন্টন বিভাগের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার অফিসারকে এই তথ্য দিতে হবে।
আধারের সঙ্গে রেশন কার্ডের লিঙ্কের মাধ্যমে এই তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পরবর্তীতে আধারের সঙ্গে প্যান লিঙ্ক থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বার্ষিক আয় জানা যাবে।
এই সব তথ্য অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায়, সেগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, কেন্দ্রের উদ্যোগে পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। এখন দেখার বিষয়, রাজ্যগুলি এই পরিস্থিতিতে কী অবস্থান নেয়। তবে, পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য দপ্তরের সঙ্গে কেন্দ্র এখনও এই বিষয়ে কোনো আলোচনা করেনি।
(NOTE) যে কোনো চাকরি , প্রকল্প বা লেটেস্ট কোনো আপডেট জানতে এখুনি আমাদের সাথে যুক্ত হন লিংক নিচে।